মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও আনুমানিক বয়স
মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন বা জিরো আওয়ারের সূচনাকাল আমাদের পার্থিব সময়ের হিসেবে ১৫ শত কোটি বছর থেকে দুইহাজার কোটি বছর আগে। বেশীর ভাগ বিজ্ঞানী এটাকে সঠিক ভাবে ১৭’৭ শত কোটি বছর আগে বলে হিসেব করেছেন। এই জিরো আওয়ারের সূচনা প্রকৃতপক্ষে একটা মহাবিস্ফোরণের সূচনালগ্ন যাকে ইংরাজীতে অভিহিত করা - হয়েছে Big Bang বলে।
মহাবিস্ফোরণ ও মহাবিশ্বের জন্ম
প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে এই মহাবিস্ফোরণের আগে কি ছিল ?
চতুর্থ শতাব্দীতে সেন্ট অগাষ্টিনকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল যে পৃথিবী সৃষ্টির আগে ঈশ্বর কি করছিলেন, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে পৃথিবী সৃষ্টির ‘আগে’ বলে কিছু ছিলনা। কেননা, পৃথিবী সৃষ্টির সাথে সাথেই সৃষ্টি করা হয়েছে সময়। সেন্ট অগাষ্টিনের এই দার্শনিক উত্তরের মতো বর্তমান বিজ্ঞানীরাও একই উত্তর দিতে বাধ্য হচ্ছেন যে বিগ ব্যাংগ ঘটার ‘আগে’ বলেও যেমন কিছু ছিলনা, তেমনি তার বাইরে তখন কি ছিল তার উত্তরে বলতে হচ্ছে তার বাইরে’ বলে কিছুরও অস্তিত্ব নেই। আগে এবং পরে বলে কথাগুলোর জন্ম হয়েছে যে বিশেষ জিনিষটিকে ভিত্তি করে তা হচ্ছে 'সময়'।
বিগ ব্যাংগ সূচনা হওয়ার আগে সময় বলতে কোন জিনিষ ছিল না বলে আগে এবং পরে বলেও কোন কিছু মহাবিশ্বে অস্তিত্বমান ছিল না। সময় সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই তা অদ্ভুতভাবে এক অন্তহীন আগে থেকে অন্তহীন পরের দিকে প্রবাহিত হওয়া শুরু হলো। তাই আমরা শুধু মহাবিশ্ব শুরু হওয়ার মুহূর্তটি থেকেই কল্পনা করতে পারি তার আগে থেকে নয়।
পদার্থ বিজ্ঞানের চোখে মহাবিশ্ব
এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে কেন সময় (Time) ঐ বিশেষ মুহূর্তটি থেকে শুরু হলো? পদার্থ বা বস্তু শুধু তার উপস্থিতির ফলে জ্যামিতির নাচ (Dance of Geometry) তৈরী করে অনিবার্যভাবে জন্ম দেয় দুটো জিনিসের তা হচ্ছে সময় (Time) এবং মহাশূন্য বা স্থান (Space)। সময় হচ্ছে দুটো ঘটনার (অর্থাৎ বস্তুর সাথে বস্তুর সম্পর্ক) মধ্যে দুরত্ব এবং স্থান হচ্ছে দুটো বস্তুর মধ্যে দূরত্ব-এ দুটো জিনিষই নির্ভর করে বস্তুর উপস্থিতির উপর। কাজেই এই জিরো আওয়ারের আগে (!) যেহেতু বস্তু বলে কোন কিছু ছিল না, তাই তখন কোন ঘটনাও ঘটেনি এবং এজন্যেই তখনো সময়ের উৎপত্তি হয়নি।
পদার্থবিদ্যাগত দিক থেকে দেখলে আমরা দেখতে পাই যে আধুনিক পদার্থবিদ্যা আমাদেরকে মহাজগত বিশ্লেষণে সাহায্য করতে পারে সেই বিশেষ মুহূর্তটি থেকে; যখন থেকে মহাজাগতিক পদার্থের উৎপত্তি এবং যেখান থেকে পদার্থ বিদ্যার নিয়মগুলো কার্যকর হতে শুরু হয়েছে।
পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিতের কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে মহাবিশ্বে বিরাজমান নিয়মগুলোকে ভিত্তি করে যে নিয়মগুলো আমরা দৈনন্দিন জীবনেও কার্যকর বলে দেখতে পাই। এই নিয়মগুলোকে ভিত্তি করে যদি আমরা অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীকে বিশ্লেষণ করতে যাই তবে দেখা যাবে যে এগুলো মহাজগতের সৃষ্টি মুহূর্ত পর্যন্ত কার্যকরভাবে বস্তুজগতকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হলেও এ সমস্ত নিয়ম বা সূত্র অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত কার্যকর থাকতে পারে না। এভাবে আমরা মহাবিশ্বের উৎপত্তির, অর্থাৎ টাইম জিরোর কত কাছাকাছি পৌঁছাতে পারি।
এ নিয়মগুলো বিশ্বসৃষ্টি-মুহূর্তের বহুকোটি ভাগের একভাগ সময়কালের কাছাকাছি পর্যন্ত (১০-৪৩ সেকেন্ড) কার্যকর প্রতীয়মান হয়, যে সময়ে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ শুরুকালীন আয়তন মাত্র ১০-৩৩ সেন্টিমিটার (তুলনীয়ঃ একটি পরমাণুর ব্যাস ১০- ৮ সে. মি.) এবং তা অচিন্তনীয় ঘনত্বের (Incredible high (density) অধিকারী।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে যদি প্রশ্ন করা যায় ঠিক এর আগের মুহূর্তটিতে কি ছিল তবে তার উত্তর পদার্থ বিজ্ঞান দিতে পারেনা। ঐ মুহূর্তটিতেই (যাকে বলা হয়ে থাকে প্লাঙ্কের দেয়াল বা Planck Wall ) পদার্থ বিজ্ঞানের সমস্ত থিয়োরী যেমন মহাকর্ষবল, পরমাণু বিদ্যা ইত্যাদির সমস্ত সূত্র ভেঙ্গে পড়ে। কাজেই এই "প্লাঙ্ক-দেয়াল" এর আগে কোন কিছু (যদি আদৌ তা থেকে থাকে) বর্তমান পদার্থবিদদের দ্বারা ব্যাখ্যা করা তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও অসম্ভব।
মহাবিশ্বকে আমরা কিভাবে চিন্তা করতে পারি
সম্ভবতঃ এখানেই শুরু হয় দার্শনিকদের ভূমিকা। কিন্তু বিশ্বজগতের উৎপত্তি ও তার বিকাশের সমস্যা বিশ্লেষণে তাদের ভূমিকা সম্ভবতঃ বাস্তব নির্ভর (Objective) না হয়ে বেশী পরিমাণে ব্যক্তি নির্ভর (Subjective) হয়ে পড়ে। অধিকন্তু বিজ্ঞানীদের মতো তাদের ধারণাকে গাণিতিকভাবে প্রমাণ করার সুযোগ নেই- তা শুধু যুক্তি বা লজিকের মাধ্যমেই পরিমাপ করতে হয়। এ জন্যেই হয়তো মহাবিশ্বের রহস্য সন্ধানে সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক ধারণা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা যতটুকু ঐক্যমতে পৌঁছুতে পারেন, ঠিক ততটুকু ঐক্যমতে দার্শনিকরা পৌঁছুতে পারেন না। বিশ্ব জগতের রহস্য উন্মোচনে এটা একটা বড় সমস্যা সন্দেহ নেই।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে বিগ ব্যাংগ নামক মহাবিস্ফোরণের ফলশ্রুতিতেই বস্তুর জন্ম প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ফলে একই সাথে শুরু হয় সময়ের অন্তহীন প্রবাহ এবং বস্তুজগতের স্থান বা মহাশূন্য। আমরা মহাবিশ্ব অস্তিত্বমান হওয়ার কল্পনা করতে পারি ঐ বিশেষ মুহূর্তটি থেকে, যখন একই সাথে বস্তু, সময় এবং মহাশূন্য এই তিনটি জিনিষের উদ্ভব ঘটে। ঐ প্রাথমিক মুহূর্তটি থেকেই শুরু হয় কিছু একটা হওয়ার প্রক্রিয়া, যা সময়ের প্রবাহে তার পরিবর্তিত রূপে পরিণত হয় পদার্থ, ছায়াপথ, গ্রহ-তারকা এবং উন্নততর পদার্থ জীবন (Life) ও চিন্তাশীল, প্রজ্ঞাবান জীবিত পদার্থে (Intelligent, conscious life)।
জিরো আওয়ারের সূচনার ঐ বিশেষ মুহূর্তটি কেমন ছিল? শুরুর সময়টিতে মহাবিশ্বের ঘনত্ব যদিও হওয়া উচিত অসীম বা অনন্ত (Infinite), ঠিক তেমনি তার তাপমাত্রাও তবে এই অসীম ঘনত্ব ও অসীম তাপমাত্রার বিশ্বের ক্ষেত্রে পদার্থবিদ্যার নিয়মগুলো কার্যকর হয়না বলে তা পদার্থ বিজ্ঞানীদের ধারণায়ও প্রতিভাত হয়না।
আধুনিক মহাজাগতিক ধারণায় মহাবিশ্বকে তখন থেকেই অস্তিত্বশীল মনে করা হয়, যখন একটি মহা-ঘন ও মহা-উত্তপ্ত একক (Superdense, superhot singularity) বিন্দুতে তার তাপমাত্রা এক সেকেন্ডের একলক্ষ ভাগের একভাগ সময়ের মধ্যে (105 Sec) তার অসীম উত্তপ্ত অবস্থা থেকে কমে এক লক্ষ কোটি কেলভিন ডিগ্রীতে (1012 K Degrees) নেমে আসে। এই তাপমাত্রায় বস্তুকণিকা (Particles) এবং বিকিরণ (Radiation) পরস্পর পরস্পরে পরিবর্তনযোগ্য এবং ফলতঃ বিকিরণ থেকে প্রোটন এবং ইলেকট্রন নামক মৌলিক বস্তুকণিকার উদ্ভব ঘটতে পারে।
সুতরাং এ সময়ে মহাবিশ্বের উপাদান দাঁড়ায় একটি বিশৃংখলাপূর্ণ মহাজাগতিক স্যুপ (Cosmic Soup) যা ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন ও বিকিরণে পূর্ণ এবং পরস্পর মিথস্ক্রিয়ার (Interaction) ফলে বস্তুকণিকা ও বিকিরণ পরস্পর স্থান বিনিময় করছে। তবে প্রোটন নামক বস্তুকণিকা তৈরী হওয়ার সাথে সাথে তৈরী হওয়া শুরু হলো প্রতিবস্তুর (Antimatter) উপাদান সমপরিমাণ প্রতিবস্তুকণিকা (Antiparticles) এবং এই সদ্য তৈরী হওয়া বস্তুকণিকা ও প্রতিবস্তুকণিকা একত্র সংস্পর্শে আসা মাত্র দুটোই সম্পূর্ণ ধ্বংস (Total anihilation) হয়ে আবার বিকিরণে পরিণত হতে লাগলো। বস্তুর সৃষ্টি ও ধ্বংসের সেই আদি অবস্থায় অবশ্য প্রাথমিক বিশ্বের মোট ‘বস্তু ও শক্তির (Total mass and energy) পরিমাণ একই রকম স্থির (Constant) ছিল।
মহাবিশ্বের ‘সৃষ্টির' সাথে সাথেই প্রচন্ড একটা বিস্ফোরণের মত চারদিকে শুরু হয়। তার ক্রমপ্রসারণ। এই ক্রমপ্রসারণের ফলে তাপসঞ্চালন বিদ্যা বা থার্মোডিনামিক্সের সূত্র অনুযায়ী তাপমাত্রা আরো কমতে শুরু করলো এবং এক সেকেন্ডের ১০ ভাগের ১ ভাগ (01 Sec.) সময়ের মধ্যে তা দাঁড়ালো দশ হাজার কোটি ডিগ্রীতে (1011 K)। জন্মের ১৪ সেকেন্ড পরে মহাবিশ্ব আরো প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার তাপমাত্রা দাঁড়ালো ৩ শত কোটি ডিগ্রীতে (3X109 K)। এ অবস্থায় রেডিয়েশন থেকে ইলেকট্রন, পজিট্রন ইত্যাদি বস্তু এবং প্রতিবস্তু কণিকা তৈরী হওয়ার ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে। ইতিমধ্যে তৈরী হওয়া ইলেকট্রন ও পজিট্রনগুলো আবার পরস্পর সংস্পর্শে এসে ধ্বংস হয়ে পুনরায় বিকিরণে পরিণত হলো।
এ সময়েই কোন অব্যাখ্যাত কারণে কিছু ‘অতিরিক্ত' (left-over) বস্তুকণিকা (ইলেকট্রন ও প্রোটন) প্রতিবস্তুকণিকার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে পুনরায় বিকিরণে পরিণত হওয়া থেকে বিরত থাকে। এই অতিরিক্ত বস্তুকণিকা থেকেই কাল ক্রমে উৎপত্তি হয় ছায়াপথ, তারকারাজি, গ্রহ-উপগ্রহ এবং পরবর্তীতে জীবন ও মানুষ- ইত্যাদি সমস্ত কিছুর। যদি সে সময়ে এই অতিরিক্ত বস্তুকণিকা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা না পেতো, তবে মহাবিশ্ব ভরপুর থাকতো শুধু বিকিরণে, কোন পদার্থ বা বস্তু তাতে অস্তিত্বশীল হতো না।
তবে এটা সম্ভবপর হওয়া বিচিত্র নয় যে বর্তমান মহাবিশ্বে যে পরিমাণ বস্তু রয়েছে, হয়তো ঠিক একই পরিমাণ প্রতিবস্তুও তাতে রয়েছে- কিন্তু দুটোই এক অজানা কারণে পরস্পর পরস্পর থেকে বিছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। অন্যথায় একত্র সংস্পর্শে আসা মাত্রই তা আবার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে বিকিরণে পরিণত হতো। হয়তো আমরা টেলিস্কোপ দিয়ে দূরের যে সমস্ত ছায়াপথ গুলো দেখতে পাই তাদের কিছু কিছু তৈরী প্রতিবস্তু দিয়ে প্রতিবস্তু সূর্য, প্রতিবস্তু গ্রহ, এমনকি প্রতিবস্তু মানুষও হয়তো তাতে রয়েছে। দৃশ্যমান বস্তুজগত, অর্থাৎ আজকের এই মহাবিশ্ব বস্তু-প্রতিবস্তুর মধ্যে সংঘাত এড়িয়ে সন্তর্পণে বেঁচে থাকা সামান্য পরিমাণ অতিরিক্ত বস্তু (হয়তো প্রতিবস্তুও) থেকেই উদ্ভূত।
মহাবিশ্বের আরো প্রসারণের পর যখন তাপমাত্রা কমে দাঁড়ালো ১০০ কোটি ডিগ্রী (109 K) অর্থাৎ বর্তমান সূর্যের কেন্দ্রের উত্তাপের ৭০ গুন বেশী, তখন অনেক বস্তু কণিকা অর্থাৎ ইলেকট্রন, নিউট্রন ও প্রোটন একত্র হয়ে হিলিয়াম পরমাণুর কেন্দ্র, (Nucleus) গঠন করে এবং ইলেকট্রন ও প্রোটন মিলে হাইড্রোজেনের পরমাণুর কেন্দ্র গঠন করে। সৃষ্টির চতুর্থ মিনিটে মহাবিশ্বের বস্তু উপাদানের ৭৫ শতাংশই ছিল হাইড্রোজেন এবং বাকী অংশ হিলিয়াম পরমাণু। এই চতুর্থ মিনিটের পর থেকেই পদার্থের সৃষ্টি ও ধ্বংসের (Creation / Annihilation) প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তী ৭ লক্ষ বছরে ক্রমপ্রসারমান মহাবিশ্বের তাপমাত্রা কমে দাঁড়ালো ৫ হাজার কেলভিন ডিগ্রীতে, যখন ইলেকট্রনগুলোর অবস্থান পরমাণুর মধ্যে দৃঢ়বদ্ধ হয়। ১০ লক্ষ বছর বয়সে নবজাতক মহাবিশ্বের তাপমাত্রা দাঁড়ায় মাত্র ৬০০ কেলভিন ডিগ্রীতে। এ সময়েই প্রাথমিক গ্যাস হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও পরবর্তীতে উদ্ভূত সামান্য পরিমান লিথিয়াম এবং বেরিলিয়াম থেকে মহাবিশ্বের প্রাথমিক ঘনীভূত বস্তু বা কন্ডেনসাট তৈরী শুরু- যার থেকে উৎপত্তি হয় নীহারিকাগুচ্ছ। পরবর্তীতে তারকার জন্ম ও মৃত্যুর মাধ্যমে তৈরী হয়েছে বর্তমান বিশ্বের ভারী ভারী মৌল পরমাণুগুলো – যেমন স্বর্ণ, সীসা, লৌহ, পারদ ইত্যাদি মৌল ধাতুগুলোর পরমাণুর।
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকালীন একটি অত্যাশ্চর্য ঘটনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, আইনষ্টাইন পরবর্তী যুগের সবচেয়ে প্রতিভাবান তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। দীর্ঘ দিন যাবত অচিকিৎস্য স্নায়ুরোগে আক্রান্ত হয়ে চলৎশক্তিহীন, পঙ্গু অবস্থায়, এমনকি বাক্শক্তিহীন হয়েও কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে তিনি তার চমৎকার মস্তিস্ককে মহাবিশ্বের সর্বশেষ রহস্য সমাধানে কাজে লাগিয়ে চলেছেন। হকিং ১৯৭১ সনে দেখান যে যদি আদি অগ্নিগোলক (Primordial fireball) অবস্থা থেকে মহাবিশ্বের প্রসারণে কোটি কোটি ভাগের একভাগও বিচ্যুতি ঘটতো, তাহলে আজকের মহাবিশ্ব অস্তিত্বমান হওয়া সম্ভবপর ছিল না।
যদি মহাবিশ্ব একলক্ষ কোটি ভাগের একভাগ দ্রুতগতিতে প্রসারমান হতো তাহলে তা এমনভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তো যে গ্যাসমেঘে মহাকর্ষবল কার্যকর হয়ে তা ঘনীভূত হয়ে তারকাদের উৎপত্তি ঘটাতে সক্ষম হতো না। আবার তা যদি একলক্ষ কোটি ভাগের ১ ভাগ শ্লথগতিতেও ঘটতো তবে তা প্রসারণ শুরু হওয়ার ১০০ কোটি বছরের মধ্যেই মহাকর্ষবলের প্রভাবে মহাবিশ্বকে সংকুচিত করে আনতো। সে ক্ষেত্রেও বর্তমান মহাবিশ্বের মতো তারকাদের উৎপত্তি ঘটতে পারতো না বলে জীবনের উৎপত্তির কোন সম্ভাবনা দুটো ক্ষেত্রেই থাকতো না। কেন মহাবিশ্ব একরকম সুক্ষ্ম সংকট সীমারেখার (Critical margin) মধ্য দিয়ে প্রসারিত হলো তা এখন পর্যন্ত অব্যখ্যাত।
এভাবেই শুরু হয় মহাবিশ্বের সৃষ্টি— অর্থাৎ জেনেসিস পর্ব। কোন শিল্পীর ছবি আঁকা শুরু করার প্রাক্কালে যেমন শুরু হয় রঙ গুলে নেয়ার প্রক্রিয়া, তেমনি একই ভূমিকা মহাবিশ্বের ঐ প্রাথমিক মুহূর্তগুলোর। মহাবিশ্বের মহাক্যানভাসে এক অদ্বিতীয় চিত্র অংকনের সেই থেকে শুরু- যা আজও চলছে এবং হয়তো অনন্তকাল চলবে।
0 Comments