ধনী হওয়া মোটেই কঠিন ব্যাপার নয় যদি আপনি তা হতে চান। আপনার সামনে অসংখ্য না হলেও বহু সংখ্যক সুযোগ খোলা রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করলে আপনি ধনী হতে পারেন। পুরাতন পদ্ধতিতে ধনী হবার চিন্তা, যা আপনার পূর্বপুরুষেরা আপনাকে শিখিয়েছে, আপনাকে ত্যাগ করতে হবে, নতুন সুযোগ আপনার কাছে নতুন পদ্ধতি উপস্থাপন করেছে। এগুলো সম্বন্ধে আপনার জ্ঞান থাকতে হবে এবং এগুলোকে ব্যবহার করার জন্য আপনার মানসিক প্রস্তুতিও থাকতে হবে। মনে রাখবেন, গরীব তারাই যারা কুঁড়ে, ধীর, সব সময় পস্তায় ও ইতস্ততায় ভোগে। আর যারা পরিশ্রমী, ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, কৌশল ব্যবহারে সক্ষম তাদের পক্ষেও ধনী হওয়া কোন কঠিন ব্যাপার নয়। একজন বিখ্যাত আর্থিক বিশ্লেষণ-বিশেষজ্ঞ কিভাবে কোটিপতি হওয়া যায় সে ব্যাপারে বলতে গিয়ে বলেছেন: এটা কোন কঠিন ব্যাপার নয়, যদি আপনি তিনটি বিষয়ের দিকে নজর দেন। এ তিনটি বিষয় হলোঃ ১. আপনি কখন, অর্থাৎ জীবনের কোন সময়ে অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেছেন, যত তাড়াতাড়ি শুরু করেন ততই সহজে আপনি কোটিপতি হতে পারবেন, বুড়ো বয়সে অর্থ উপার্জন শুরু করলে কাজটি কঠিন হবে, ২. আপনি কাজ শুরু করার পর আপনার উপার্জন থেকে কত হারে প্রান্তিক সঞ্চয় করেছেন, এ হার বেশী হলে অল্প সময়ে কোটিপতি হওয়া যাবে, ৩. আপনার সঞ্চিত অর্থ আপনি কোথায় কীভাবে খাটিয়েছেন, যদি ভালোভাবে খাটান তা হলে কোটিপতি হতে সময় অল্প লাগবে, আপনার কৌশল হবে আপনার অর্থকে এমনভাবে খাটানো যাতে করে আপনি যেভাবে নিজের জন্য পরিশ্রম করছেন ঠিক সেভাবে যেন আপনার অর্থ আপনার জন্য পরিশ্রম করে। উপরের এ তিনটি বিষয় অতি সহজ, কিন্তু মৌলিক, এ তিনটি বিষয়কে এড়িয়ে কেউ ধনী হতে পেরেছে বলে জানা নেই। হতে পেরেছে হয়তো লটারী কিংবা চোরাই কাজের মাধ্যমে, কিন্তু সেগুলো অস্বাভাবিক পন্থা, আমরা স্বাভাবিক অবস্থার মাধ্যমে ধনী হওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। এর সম্পূরক হিসাবে বলা যায় আপনার আয়ের তিনটি উৎস রয়েছেঃ প্রথমটি আপনার কাজ, দ্বিতীয়টি আপনার খাটানো অর্থ, তৃতীয়টি দান পাওয়া। আর এ তিনটি উৎসের মধ্যে কোনটির উপর আপনি নির্ভর করতে চান? নিশ্চয়ই প্রথম দুটোর উপর; কারণ দান গ্রহণে কোন সুখ নেই, দান নিয়ে কেউ ধনী হতে পেরেছে বলেও আমাদের জানা নেই।
যেসব কারণে মানুষ অর্থ উপার্জনে ব্যর্থ হয়
অর্থ বিশ্লেষকদের মতে ছয় কারণে মানুষ ধনী হতে ব্যর্থ হয়। এগুলো হচ্ছেঃ দীর্ঘসূত্রিতা, নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য স্থিরীকরণে ব্যর্থতা, আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে অর্থ কি করতে পারে সে সম্বন্ধে অজ্ঞতা, কর আইনকে না বোঝা কিংবা একে ভুলভাবে প্রয়োগ করা, ভুল ধরনের জীবন বীমা খরিদ করা এবং সর্বশেষে, জেতার জন্য একটি উপযুক্ত মানসিক কাঠামো তৈরী করতে ব্যর্থ হওয়া।
১. দীর্ঘসূত্রিতাঃ
মনে রাখবেন সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘসূত্রিতা আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দেখা দিতে পারে, আপনার হাতে সময় বেশী নেই, যেটুকু সময় আছে এ সময়কে আপনি যদি দ্বিধাদ্বন্দ্ব ত্যাগ করে অর্থ উপার্জনের কাজে লাগাতে পারেন তাহলে আপনার জন্য ধনী হওয়া সহজ হবে, সময় কমে গেলে তখন অনেক বেশী অর্থ লাগবে আপনাকে ধনী হবার জন্য। এ মূল্যবান সম্পদকে দ্বিধাদ্বন্বের মাধ্যমে নষ্ট করবেন না, এ সম্পদ সবার মধ্যে সমভাবে বন্টিত। সময় কখনো একেবারে ঠিক হয়ে আপনার কাছে ধরা দেবে না, একেবারে ঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা না করে আর্থিক স্বাধীনতার পথে আপনাকে ত্বরিত গতিতে পা বাড়াতে হবে। মনে রাখবেন জীবন মানে চলা, কোথাও বসে থাকার বিষয় নয়, *একদিন আপনি এটা করবেন' এ ধারণা ত্যাগ করুন, আজই ঐ কাজটি শুরু করুন। কারণ পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত বলে কিছু নেই।
২. লক্ষ্য স্থিরীকরণে ব্যর্থতা
আপনি যদি জীবনে কোন কিছুর প্রতি লক্ষ্যই স্থির না করেন তা হলে কোন কিছুর প্রতি আঘাতও করতে পারবেন না। জীবনে এমন অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় যারা পরিকল্পনা করেনি। সাফল্যের জন্য পরিকল্পনা না করা আর ব্যর্থতার জন্য পরিকল্পনা করা প্রায় একই জিনিষ, কারণ পরিকল্পনা না করলে মানুষ আর্থিক জীবনে ব্যর্থ হতে বাধ্য। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় যারা সাফল্য লাভ করেছে তারা শিক্ষায়, ওজনে, উচ্চতায়, রঙে কিংবা পারিবারিক পটভূমি থেকে ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু এক বিষয়ে তারা এক; তা হলো তারা জানে তারা কোথায় যাচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা যদি ঠিকভাবে কাজ না করে তারা পুনঃপরিকল্পনা করছে এবং দৃঢ়তার সাথে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাচ্ছে। বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক উইলিয়াম জেমস বলেছেন, 'মন যেটা বিশ্বাস ও ধারণ করতে পারে সেটা অর্জনও করতে পারে'। আজই আপনার আর্থিক লক্ষ্য সম্বন্ধে ভাবুন, আপনার মন এমন কোন ধারণা আপনাকে করতে দেবে না যা আপনি অর্জন করতে পারবেন না। লক্ষ্য স্থাপনের একটি উপ-উপযোজন হচ্ছে অটলতা, লক্ষ্য স্থাপন করতে পারলে ঐ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুযোগ আপনা থেকে এসে যাবে। অর্থ উপার্জনে সাফল্য ভাগ্য কিংবা দৈবজনিত কোন বিষয় নয়, অর্থ উপার্জনের ভবিষ্যৎ সফলতাকে নিশ্চিত করা যায় যদি আপনি ঠিকমত আপনার পরিকল্পনাকে ঠিক করে নিতে পারেন এবং আপনি ঐ পরিকল্পনাকে অনুসরণ করেন।
৩. অর্থ সম্বন্ধে অজ্ঞতা
আমাদের সমাজে একটি দারুন শূন্যতা আছে। এ শূন্যতা আমাদের শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যেও আছে। আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের ছাত্রদেরকে অনেক কিছু শিক্ষা দিচ্ছে, সাধারণ অংক থেকে কম্পিউটার টেকনোলজি পর্যন্ত । কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান একটা জিনিষ শেখাচ্ছে না, তা হলো একটি মুক্ত অর্থনীতিতে কিভাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনা করতে হয়। এ শূন্যতা এতই ব্যাপক যে, অনেকে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও আর্থিক অনিশ্চয়তায় ভুগছে, নানাবিধ সমস্যায় পড়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। আর্থিক সফলতার জন্য অর্থকে ভালো করে জানতে হবে; জানতে হবে অর্থ কী করতে পারে, আর কী করতে পারে না। পুরানো অর্থ-নিয়ম আজ আর কাজ করছে না, তাই নিত্যনতুন অর্থ-নিয়ম সম্বন্ধে নিজকে অবহিত রাখতে হবে, পূর্বের ন্যায় ব্যাংকে অর্থ রাখা আজ আর আগের মত লাভজনক নয়, তাই অর্থকে কোথায় নিতে হবে সে সম্বন্ধে জানতে হবে।
৪. কর আইনকে বুঝতে ব্যর্থ হওয়া
কর আয়ের উপর এক বিরাট বোঝা। মনে রাখবেন, যে আয় আপনি উপার্জন করছেন তার সবটি আপনার নয়, এতে সরকারের তথা সমাজের ভাগ রয়েছে, কিন্তু কত কর দেবেন সেটা অনেকটা আপনার উপর, আপনি অজ্ঞতার কারণে বেশীও দিতে কম দিয়েও বাঁচতে পারেন। কর শুধু সরল হারে নেয়া হয় না; আপনার আয় বাড়লে করের হারও বাড়বে, এমন এক অবস্থায় পৌঁছতে পারে যখন আর বাড়তি আয় করার উৎসাহ থাকবে না। তবে নানাবিধ কর রেয়াত এমন অবস্থায় পৌঁছতে দেয় না। কিভাবে কর এড়ানো যায় তা আপনাকে জানতে হবে, কর ফাঁকি দেয়া নয়। করকে স্থগিত রাখা যায় কিংবা বিভিন্ন বিনিয়োগ সুযোগ ব্যবহারের মাধ্যমে করের বোঝাকে কমানোও যায়। কর আইন অনেক সময় সহজবোধ্য নাও হতে পারে; যতটুকু সম্ভব নিজে জানুন, বাকীটার জন্য কর আইনজীবির পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, ফাঁকি দিয়ে কম কর প্রদান যেমন অপরাধ, তেমনি অজ্ঞতাবশত বেশী কর প্রদানও অপরাধ। বিদেশে ভুলবশত বেশী কর প্রদান করলে ফেরত দেবার ব্যবস্থা আছে; আমাদের দেশে তা নেই। ভুল করে বেশী কর দিলে আপনার আয় গেল তো গেলই। করের প্রকৃত বোঝা হচ্ছে সরকার যা ব্যয় করছে, কম বায় করলে কম বোঝা হবে। তাই বোঝা কমানোর প্রকৃত উপায় হচ্ছে বেশী ব্যয় থেকে সরকারকে বিরত রাখা। যদি সরকার যা কর আদায় করছে তার চেয়ে বেশী ব্যয় করে তাহলেও আমরা কিন্তু বাড়তি ব্যয়ের সমান কর দিয়ে যাচ্ছি, তা হলো মুদ্রাস্ফীতির মাধ্যমে।
৫. 'ভুল' জীবনবীমা খরিদ করা
আসলে খুব কম লোকই স্বেচ্ছায় জীবনবীমা খরিদ করে, তাদের কাছে এটা “বিক্রয় করা হয় বুঝিয়ে-সুঝিয়ে। তারা যদি জানতো জীবনবীমার উদ্দেশ্য কি এবং কিভাবে একটি জীবন বীমাকে সন্নিবেশিত করা হয় তাহলে জীবনবীমা খরিদ করার মতো ভুল কাজ তারা করতো না। জীবনবীমা কি জন্য? আপনার জীবনে কিছু ঘটলে সহায়তা পাবার জন্য। সে সহায়তা আপনি নিজেও পেতে পারেন, আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার পরিবারবর্গও পেতে পারে। বীমা আপনাকে ঝুঁকি সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু একবার মনে করুন, আপনি যদি বীমায় বিনিয়োগকৃত অর্থ অন্যভাবে খাটিয়ে আরো বেশী অর্থ অর্জন করতে পারেন, তাহলে বীমার দরকার কি? বীমা একটি ব্যবসা, বীমা কোম্পানী আপনার থেকে প্রিমিয়াম নিয়ে অন্যত্র খাটিয়ে যে অর্থ উপার্জন করছে তা দিয়ে আপনাকে ঝুঁকির মূল্য দিচ্ছে। তবে বলতে পারেন, আপনি যদি আপনার অর্থকে খাটানোর সময় না পান তাহলে কি হবে। 'হ্যাঁ' সে ক্ষেত্রে বীমা করার যুক্তি আছে বটে। বীমা কোম্পানী পরিসংখ্যানশাস্ত্রের উপর নির্ভর করে বড় বেশী । তারা সম্ভাবনা হিসাব করে তাদের বীমাকৃত গ্রাহকদের মধ্যে কত লোক আগে মরতে পারে, কত লোক পরে মরতে পারে এবং কত প্রিমিয়াম ঠিক করলে তাদের পোষাবে। এ সবের মাধ্যমে তারা যে লাভ প্রদান ঠিক করলো তা তাদের পক্ষেই যাবে। আপনিও আপনার নিজের অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য এবং জীবনে বেঁচে থাকার বিষয়ে পরিসংখ্যান বিজ্ঞান প্রয়োগ করতে পারেন এবং বীমাকে পরাজিত করতে পারেন। মনে রাখবেন এ পরাজয় করা একবারে নিশ্চিত নাও হতে পারে। তবে ফলাফলের হিসাব গড় সম্ভাবনার উপর থাকলে জীবন বীমাকে এড়িয়ে যেতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা জীবনবীমা করাতে লাভ আছে যদি বীমা খরিদকারী তাড়াতাড়ি মরে যায়, কিন্তু পুরো বীমা-সময় বেঁচে থাকলে সময়ের শেষে যে অর্থ পাওয়া যাবে তা বীমাকারীর নিকট তেমন অর্থবহ নাও হতে পারে। অর্থবহ না হবার অন্যতম কারণ মূদ্রাস্ফীতি, এটা পাওনা অর্থের প্রকৃত মূল্যকে অনেক কমিয়ে দেয়, যার কারণে দেয় অর্থ প্রকৃত অর্থে পুরোটা ফেরত নাও আসতে পারে। মূদ্রাস্ফীতির হার অর্থনীতিতে প্রায় সময়ই অনিশ্চিত থাকে। এ হার যদি হঠাৎ করে বেড়ে যায় তাহলে প্রাপ্য অর্থ সমহারে মূল্যহীন হয়ে পড়বে। বীমা কোম্পানীর এজেন্টকে যদি মূদ্রাস্ফীতির মাধ্যমে অর্থ ক্ষয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয় তারা প্রায়শই কোন সদুত্তর দিতে পারে না। জীবনবীমাও শেষ প্রিমিয়াম কিস্তি দেয়া পর্যন্ত লাভজনক হতে পারে যদি মেয়াদ শেষে প্রাপ্য অর্থকে মূদ্রাস্ফীতির হারে সঙ্গে বেঁধে দেয়া যায়।
৬. জেতার জন্য মানসিকতা তৈরী করতে না পারা
এটা সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। সংকল্প না থাকলে অর্থ উপার্জন সম্ভব নয়, সেজন্য চাই উপযুক্ত মানসিকতা, উপযুক্ত মানসিকতার জন্য চাই দৃষ্টিভঙ্গি, চেষ্টা, কুসংস্কার থেকে মুক্তি, উৎসাহ, এবং লেগে থাকা। কেউ বলতে পারে যে, সে বিনিয়োগ করলেই দাম কমে যায়, সে কখনও বিনিয়োগ করে অর্থ উপার্জন করতে পারেনি; এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি না বদলানো পর্যন্ত সে একজন সফল বিনিয়োগকারী হতে পারবে না। যারা সত্যিকারভাবে তৈরী, আশাবাদী তারাই অর্থ উপার্জন করে, হতাশাবাদীরা করতে পারে না। আপনি চারিদিকে দেখুন, সফলকাম লোকদের অধ্যয়ন করুন, দেখবেন তারা একটি সাফল্য থেকে আর একটি সাফল্যের দিকে যাচ্ছে। এ সমস্ত সফলকাম লোকেরা কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় হাসিল করে ফেলে। তারপর পৃথিবী বলে তারা সফলকাম, মেধাবী, ভাগ্যবান প্রভৃতি। ভাগ্য বলতে কিছু নেই, ভাগ্য আসে যখন প্রস্তুতি এবং সুযোগ এক সাথে হয়। আপনি তৈরী হয়ে গেলে দেখবেন আপনি ভাগ্যবান। ধরুন, একজন কোন কোম্পানীর শেয়ার কিনল শেয়ারের দাম যখন খুব কম ছিলো তখন। তারপর ঐ শেয়ারের দর বেড়ে কয়েক গুন হয়ে গেলো এবং সে খুব ধনী হয়ে গেলো। তাকে আপনি ভাগ্যবান বলবেন? আসলে এটা তার ভাগ্য নয়, সে প্রস্তুত ছিলো। সে যখন বিয়ে করে তখন সে খুব কষ্ট করেছে নব বধূকে নিয়ে খুব সাদামাটা ঘরে বসবাস করেছে, এমনকি নিজের প্রিয় গাড়ীটি বিক্রয় করে বাসে চড়েছে, তারপর সে সামান্য কিছু সঞ্চয় করেছে। ঐ সঞ্চয় দিয়ে সে ঐ কোম্পানীর শেয়ার কিনেছে এবং বড় হয়েছে। আপনি তাকে ভাগ্যবান কলছেন? ভাগ্য এভাবেই আসে। আপনাকে একজন ভালো বিনিয়োগকারী হবার জন্য অনবরত চেষ্টা করে যেতে হবে, বুদ্ধিকে প্রয়োগ করতে হবে, জ্ঞান আহরণের জন্য ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে হবে। এগুলো যদি আপনি না পারেন তা হলে মিথ্যা অহমিকা ত্যাগ করুণ যে কেউ আপনার চেয়ে ভালো জানে না, ভালো পারে না, পেশাজীবি লোকদের শরণাপন্ন হোন যে আপনার জন্য এ কাজগুলো করে দেবে। মনে রাখবেন, পৃথিবীতে মুক্ত ভোজ বা ফ্রি লাঞ্চ বলতে কিছু নেই। আপনাকে সব সময় বিনিয়োগ নিয়ে কষ্ট করতে হবে, মাথা ঘামাতে হবে এবং ঝুঁকি নেবার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। ফ্রি লাঞ্চের মানসিকতায় যারা ভোগে তারা তাদের সঞ্চয়কে কোন প্রতিষ্ঠানে ফেলে রাখে, কোন ব্রোকারকে কমিশন দেবার ভয়ে নাড়াচাড়া করে না। সে সঞ্চয় খুবই ব্যবহুল হয়ে উঠতে পারে। বিনিয়োগ-সিদ্ধান্ত নেবার সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা নয় যে, বিনিয়োগের ব্যয় কি, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিনিয়োগ থেকে আসবে কী। মানুষের অনেক ত্রুটি বা অপারগতাকে ক্ষমা করা যায়, কিন্তু উৎসাহ-উদ্দীপনার অভাবকে ক্ষমা করা যায় না এবং উৎসাহ-উদ্দীপনাই সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন অর্থ আহরণের জন্য। আপনার এ গুনটি থাকলে লোকজন আপনাকে কাছে টেনে নেবে, সুযোগ করে দেবে আরোও বড় হবার জন্য। ভালো সিদ্ধান্ত নেবার জন্য চারিদিকে তথ্য পাওয়া যায়, আপনার অলসতা যেন এ তথ্য প্রাপ্তি থেকে আপনাকে বঞ্চিত না করে। তবে মনে রাখবেন একই সময়ে আপনি সব তথ্য নাও পেতে পারেন। কমপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় তথ্যগুলোকে জানুন ।
অধিকাংশ সময়ই মানুষ সিদ্ধান্ত খুব দেরিতে নেয় এবং এজন্যই অনেকে ব্যর্থ হয়। কিছু না করার চেয়ে ভুলটি করাও মঙ্গল। একজন পন্ডিত ব্যক্তি বলেছেন, 'কিছু করুন, তাহলে আপনি শক্তি পাবেন'। কথাটা মিথ্যা নয়, বারে বারে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। মূলধন নেই? তাতে কি, মূলধন এসে যাবে। সামান্য সঞ্চয়টুকু ব্যয় করবেন না। এটাকে জামানত হিসাবে ব্যবহার করে আরো সঞ্চয় করুন এবং আপনার অর্থ আহরণকে বাড়াতে থাকুন। কখনও আপনার আয়কে ব্যয়যোগ্য বলে মনে করবেন না, যতক্ষন পর্যন্ত আপনি আর্থিকভাবে স্বাধীন না হন। এভাবেই আপনি আপনার অর্থ শক্তি অর্জন করতে পারবেন। অন্যের মতামত দ্বারা বেশী প্রভাবিত হবেন না। যারা বেশী অর্থ উপার্জন করতে পারেনি তারা অন্যের মতামত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। মতামত খুবই সস্তা, আপনি সর্বত্রই পাবেন, কিন্তু এ সস্তা মতামত আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ করে দিতে পারে। মনে রাখবেন, অর্থ উপার্জনের জন্য 'ভালো আরম্ভকারী' এবং 'মন্দ শেষকারী' হলে চলবে না। মন্দ শেষকারীরা অল্প ধাক্কাতেই হাল ছেড়ে দেয়, এটা করলে কিন্তু চলবে না। ধাক্কা খেয়েও সচল থাকতে হবে। অনেকে বাজার যখন চড়ে তখন বিনিয়োগ করতে চায়, আবার পড়ে গেলে সব ফেলে ভাগতে চায়। ভেগে যাবার কি আছে, পতন বাজারেও যে বিনিয়োগ করলে লাভ আছে তা জানতে হবে। সফলকাম লোকেরা যেমন ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেয়, তেমনি ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলায়ও না। যারা অর্থ উপার্জনে ব্যর্থ হয়েছে তারা যেমনি ধীর গতিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছার পর ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলও করেছে। দীর্ঘসূত্রিতা এবং সিদ্ধান্তহীনতা যমজ সন্তান, এ দুটোকে জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলুন যাতে করে এগুলো আপনাকে আর্থিক ব্যর্থতার অক্টোপাসে বাঁধতে না পারে। মনে রাখবেন, সিদ্ধান্তহীনতাও একটি সিদ্ধান্ত, তবে এটা আপনার বিরুদ্ধে। সতর্কতা ভালো, তবে অতি সতর্কতা তত ভালো নয়। অসতর্কতা এবং অতি সতর্কতা উভয়ই পরিত্যাজ্য। না জেতা দোষের কিছু নয়, কিন্তু জেতার চেষ্টা না করা বেদনাদায়ক। জেতার চেষ্টায় পুরস্কার যেমন আছে, ঝুঁকিও তেমন আছে। অর্থের খেলাকে ভালো করে খেলতে হবে। এতে ঝুঁকি আসে আসুক। কারণ দৌড় বাদে, আঘাত বাদে, ভুল বাদে কোন জীবনই হয় না। এ সব বাদ দিয়ে যদি অর্থকে শুধু ব্যাংকে বন্দী করে রাখা হয় তাতে কি লাভ হলো। এখানেও পরাজয় আছে এবং এ পরাজয় অতি গ্লানিকর, মুদ্রাস্ফীতির মাধ্যমে নীরবে নিজের অর্থকে হারানো। মন থেকে এ ধারণাকে ফেলে দিন যে, অর্থ দিয়ে কিছু হয় না। অর্থ আপনার খুবই প্রয়োজন, খাদ্য দ্রব্য এবং আশ্রয়ের মতো। অর্থ কি? এটা হচ্ছে আপনার উৎপাদনের ফসল। আশ্চার্য লাগে প্রায় লোকেই বলে তাদের অর্থ চাই, কিন্তু অর্থের জন্য যে সময়, পরিশ্রম এবং কৌশল প্রয়োগ করা দরকার তা তারা করতে রাজী নয়। অর্থকে সঠিক জায়গায় রাখুন। এটা আপনার চাকর হয়ে আপনার সেবা করবে, এমনকি এ চাকরকে বেতনও দিতে হবে না, খাওয়াতেও হবে না।
0 Comments